• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

হবিগঞ্জে কাবিখা’র প্রায় ২ কোটি টাকার ফাইল গায়েব

  • ''
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২৪

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:

হবিগঞ্জের লাখাইয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির (কাবিখা) ৫৯৪ মেট্রিক টন (২ কোটি ৩৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা) চাল বরাদ্দের ফাইলটি গায়েব হয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিশেষ বরাদ্দের ফাইলটি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বরাদ্দে ৪টি ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পের কাজ ছিল। আর এই প্রকল্পগুলোতে কাজের ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইকবাল মিয়া এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করলেও বাকিরা রহস্যজনক কারণে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। সচেতন মহলের ধারণা অন্য তিন চেয়ারম্যানের দুর্নীতি ঢাকতেই প্রভাবশালী মহলের ইশারায় ফাইলটি গায়েব করা হয়েছে। শুধু প্রকল্প অফিস নয় চেয়ারম্যানদের কাছেও কোন কাগজ-পত্র নেই বলে তারা জানান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায় - ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের কাবিখা প্রকল্পের অধীনে লাখাই উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৮ রাস্তা ও ১ মাঠের জন্য ৫৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়। যার মধ্যে করাব, বুল্লা, মুড়িয়াউক ও বামৈ ইউনিয়নে দুটি করে রাস্তা রয়েছে। আর এই প্রকল্পে রাস্তার পাশাপাশি মুড়িয়াউক ইউনিয়নে একটি স্কুলের মাঠও রয়েছে।

সম্প্রতি মো. ইকবাল মিয়া নামে বামৈ ইউপির সাবেক সদস্য বামৈ ইউনিয়নের দুইটি রাস্তার কাজ না করেই ১২০ মেট্রিক টন চাল (যার মূল্য ৪৮ লাখ টাকা) আত্মসাতের অভিযোগ আদালতে মামলা করেছেন। এতে বামৈ ইউপির চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন ফুরুক মিয়া ও লাখাই উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আলী নুরসহ ৬ জনকে মামলার আসামি করা হয়।

লাখাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রকিফুল ইসলাম রাকিব কাছে মামলা ও প্রকল্পটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে ফাইলটি তার অফিসে নেই বলে জানান। তাহলে ফাইলটি কোথায় গেল ? এ প্রশ্নের উত্তরে পিআইও বলেন- আমি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এই অফিসে যোগ দিয়ে ৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করি। যে কারণে ওই বিশেষ প্রকল্পের ফাইলটি কোথায়, তা আমার জানা নেই।

একপর্যায়ে পিআইও তার অফিস সহকারীকে এই প্রতিবেদকের সামনে ফাইলটি কোথায় জানতে চান। এসময় অফিস সহকারী পিআইওকে বলেন- আমার আগে যিনি অফিস সহকারী ছিলেন, তিনি আমাকে যে ফাইলগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমি সেগুলোই আপনাকে দিতে পারছি। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সময় আমি অফিস সহকারী ছিলাম না।

যেখানে প্রকল্পের আদ্যোপান্ত থাকার কথা, সেখানেই কোনো তথ্য দিতে পারছে না খোদ অফিসই। এমন লেজেগোবরে অবস্থা দেখে ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন আদৌ হয়েছে কি না, নাকি ফাইলের মতই প্রকল্পের অর্থ গায়েব গেছে এ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। আর তা খুঁজতে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল।

অনুসন্ধানে জানা যায়- করাব ইউনিয়নে দুটি রাস্তার জন্য ১৪৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। শিমুলবাড়ির পুল হতে আগাপুরের প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত একটি রাস্তা ও প্রাইমারি স্কুলটি থেকে বেলেশরী নদীর পাড় পর্যন্ত আরেকটি রাস্তা এই প্রকল্পের অধীনে হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ।

তবে আগাপুর গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়- উল্লিখিত রাস্তা দুটি গ্রামবাসীর অর্থায়নে নির্মিত হয়। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাড়ে ৩ লাখ টাকা গ্রামবাসীকে প্রদান করেন। কিন্তু পরে ওই দুটি রাস্তাকেই কাবিখার অধীনে দেখানো হয়।

কাজের কোন কাগজপত্র ও ভিডিও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন করাব ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প কমিটির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ। তার দাবি- তিনি রাস্তা দুটির কাজ করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান টাকা দেননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ মিথ্যা। তার কাছে কাজের ভিডিও আছে বললেও এই প্রতিবেদককে তিনি দেখাতে পারেননি।

মুড়িয়াউক ইউনিয়নে দুটি রাস্তা ও একটি খেলার মাঠ সংস্কার র্ছিল ওই কাবিখার প্রকল্পের অধীনে। ১৩৫ মেট্রিক টন চালের বিনিময়ে ইউনিয়নের দুটি রাস্তা ও ৫০ মেট্রিক টনে স্কুলের মাঠ সংস্কার হয়। রাস্তা দুটির প্রকল্প সভাপতি ছিলেন এই ইউপির চেয়ারম্যান নোমান মিয়া। আর মাঠের সভাপতি ছিলেন লাখাই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম আলম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সাতাউক থেকে নখলাক পর্যন্ত রাস্তার কাজ কিছুটা সংস্কার হলেও প্রকল্পের অপর রাস্তা সুনেশর থেকে তেঘরিয়া গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। যে কারণে ভোগান্তি রয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। আর স্কুলের মাঠ সংস্কারের জন্য মাটি ভরাট করা হলেও নিয়মানুযায়ী শ্রমিক দিয়ে করানো হয়নি। ভেকু মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে বলেও স্থানীয়রা জানান।

কাবিখা প্রকল্পের কাজের কাগজ-পত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন মুড়িয়াউক ইউপির চেয়ারম্যান নোমান মিয়াও। যদিও তিনি সঠিকভাবে কাজ করেছেন বলে দাবি করেন।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে বুল্লা ইউনিয়নে দুটি রাস্তার কাজ হয়েছে। যার জন্য ১৪৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়ম মেনে কাজ সম্পাদন করেছেন বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প প্রধান অ্যাডভোকেট খোকন চন্দ্র গোপ। অন্য দুই ইউপি চেয়ারম্যানের মত তিনিও প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। রাস্তা দুটি হল- বলাকান্দি থেকে হাওরের রাস্তা পর্যন্ত ও গোয়াখাড়া থেকে বুল্লা বাজার আসার পাঁকা রাস্তা পর্যন্ত।

সরেজমিনে বুল্লা ইউনিয়নের ওই এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বললে জানা যায়- রাস্তা দুটিতে ভেকু মেশিন দিয়ে নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে বলাকান্দি থেকে হাওর পর্যন্ত কোনো রাস্তায় কোনো সংস্কার চোখে পড়েনি।

উল্লেখ্য,এর আগেও প্রকল্পে জালিয়াতির অভিযোগে কার্যালয়টির এক কর্মকর্তা ও বামৈ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুনকে কারাগারে যেতে হয়।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন- মৌখিকভাবে তথ্য চাইলে পাবেন না। তথ্য আইনে লিখিতভাবে আবেদন করুন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেছেন ফাইল কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ফাইল গায়েব হবার প্রশ্নই উঠে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads